বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভুয়া ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক বিএমডি’র পিএ বনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগ থেকে ভুয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. বনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সত্য তথ্য গোপন করে জোর তদবিরের মাধ্যমে তিনি এমন দায়িত্ব নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাজশাহী নিউজ ২৪ প্রতিবেদকের কাছে এমন তথ্য হস্তগত হয়। প্রাপ্ত তথ্যের অনুসন্ধানে জানা যায় বনি ইসরাইলের সত্য তথ্য। তবে প্রতিবেদকের প্রশ্নবানে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বনি ইসরাইল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. বনি ইসরাইল রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সালের শিক্ষার্থী ছিলেন। যশোর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। ২০১৭ সালে অনার্স পাশ করলেও এক বছর পর মাস্টার্স করেন। থাকতেন মাদার বক্স হলে। শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি রাবি ছাত্রলীগের মূল কমিটিতে ছিলেন না। বর্তমানে তিনি বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহানের ব্যক্তিগত সহকারী (অলিখিত) হিসেবে কর্মরত। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় অভিযোগকারীর অভিযোগ, বনি ইসরাইল যশোরের বাসিন্দা। অথচ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তথা শহরে অনেক সাবেক ছাত্রলীগের তুখোর নেতা আছেন। তাদের কাউকে এমন একটা গুরু দায়িত্ব না দিয়ে বনি ইসরাইলকে দেওয়া হয়েছে। মূলত: সে তার খুব ঘনিষ্ট কিছু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে এই বাড়তি দায়িত্বটি নিয়েছে। এজন্য তিনি তথ্য গোপন করে নিজেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় দিয়েছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদককে বনি ইসরাইল বলেন, ‘আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের মূল কমিটিতে ছিলাম না। কিন্তু রাবির মাদার বক্স হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। বিপ্লব-রাঞ্জু কমিটির সময় মাদার বক্স হল কমিটি হয়েছে। আমার হল কমিটিতে বরিউল ইসলাম বনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিল মাসুদ রানা। তারাই বলতে পারবে। এমনকি রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি বিপ্লব ও রাঞ্জু ভাই বলতে পারবেন’ বলেও মন্তব্য করে তিনি। 

তবে ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব দু’জনেই প্রতিবেদককে বনির মূল কমিটিতে না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বনি ইসরাইল মাদার বক্স হল শাখায় যুগ্ম আহবায়ক পদে থাকার বিষয়টিও তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন তারা। 

সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, ‘সে (বনি) কোন কমিটিতেই ছিল না। তবে ছাত্রলীগ করতো এটা সত্য।’ অপরদিকে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব বলেন, ‘হল কমিটি হয়েছিল কি-না তা আমার স্পষ্ট মনে নেই। কারণ, ওই সময় ক্যাম্পাসে একটা ঝামেলা হয়েছিল। যার কারণে কোন কাগজপত্র আমি নেইনি; এমনকি এখন পর্যন্ত আমার কাছে তদকালীন কমিটির কোন কাগজ নেই। থাকলে হয়তোবা জানতে পারতাম। তবে বনি আমার খুব কাছের কর্মী ছিল। তার বন্ধু ছিল মাসুদ, সে ভালো বলতে পারবে।’

বনি ইসরাইলের একই বিভাগের একই শিক্ষা বর্ষের ছাত্র ছিলেন মাসুদ রানা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদার বক্সের হল কমিটি অনেক পরে হয়েছিল। আমি ছিলাম সাধারণ সম্পাদক আর রবিউল ইসলাম বনি ছিল সভাপতি। ওই কমিটিতে বনি ইসরাইলও ছিল। তবে ওই সময় ক্যাম্পাসে একটা গন্ডগোল হওয়ায় আমাদের কমিটি টা পাশ হয়নি। আর সে কারণে ফেসবুকে দেওয়াও যায়নি। তবে সে (বনি) মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল না; ছিল হল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।’

বনির দাবি ‘রাজশাহী বিভাগের নির্বাচন পর্যবেক্ষকের ১০ জনের যে কমিটির তালিকা কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছে তাতে আমার পদবী ভুল করেছে। এটা প্রিন্টিং মিস্টেক। এতে আমার দোষ নাই।’ কেন্দ্রে ভুলের ব্যাপারে জানানো হয়েছে কি-না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবিষয়ে আমি রাজশাহী বিভাগের নির্বাচন পর্যবেক্ষক উপ-কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক মেরিনা জাহান এমপি ম্যাডামকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি এরপর আর কোন সাড়া শব্দ পায়নি। তাই এসব বিষয়ে আর মাথা ঘামায়নি।’

তবে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক কমিটিতে পদবী সম্পর্কিত যে ভুল ছিল তা সংশোধন করার জন্য ঢাকা বলেছি। তা সংশোধন করা হবে।’

রাজশাহী বিভাগের নির্বাচন পর্যবেক্ষক কমিটিতে বনি ইসরাইলের পদবী ভুল ছিল, সেটি বিভাগী সমন্বয়ক হিসেবে আপনাকে অবগত করেছিল কি? জানতে চাইলে বিভাগীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক মেরিনা জাহান এমপি বলেন, ‘নাহ! এ ব্যাপারে সে (বনি ইসরাইল) আমাকে কিছুই জানায়নি। জানতে তা সংশোধন করে পাঠাই দিতাম।’ 

তথ্য গোপন করে নির্বাচন পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আহামরি তেমন কোন বিষয় না। সেন্ট্রাল থেকে এমপিদের কাছে দলীয় নেতাদের নাম-পদবী চাওয়া হয়েছিল। তারাই তাদের পচ্ছন্দের লোকদের এসব কমিটিতে নাম দিয়েছে। তাদের কাজ তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। যদি বিদেশী কোন পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে আসেন এবং তাদের কেন্দ্র পরিদর্শনের প্রয়োজন পড়ে; তখন এরা তাদের কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। তারা কেন্দ্রে ঢুকতেও পারবে না। সুতরাং, কেউ যদি তথ্য গোপন করে এমন দায়িত্ব পেয়ে থাকে তবে এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই।’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: